আশিস রহমান ::
হাওরের বোরো ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও এখনোব্দি শেষ হয়নি দোয়ারাবাজার উপজেলার অধিকাংশ ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ। কৃষকরা বলছেন, এবারও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যকলাপের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বাঁধের কাজে। বাঁধের পিআইসি গঠনে দলীয়করণ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে গণশুনানী ছাড়াই বাঁধ সংশ্লিষ্ট জমির কৃষকদের বাদ দিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। অনেক পিআইসিতে পর্যাপ্ত মাটি পড়েনি, মাটির বদলে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেহের নিগার তনু দাবি করছেন, বাঁধের কাজ ৯৯ ভাগ স¤পন্ন হয়েছে। এবার পিআইসি গঠনে কোনো দলীয়করণ হয়নি। স্বচ্ছভাবে গণশুনানি করেই পিআইসি গঠন করা হয়েছে। বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, সবাইকে দিয়ে তো পিআইসি গঠন সম্ভব নয়। যারা পিআইসি পায়নি তারাই বিভিন্ন ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ৪৭ টি পিআইসির মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। ৪৭ টি পিআইসির বরাদ্দ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন পিআইসি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ পিআইসিতে এখনো ঘাস লাগানো হয়নি। অধিকাংশ বাঁধেই এখনো দুর্মুজ করা হয়নি। পিআইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাঁরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ঘাস জন্মাচ্ছে না। আশপাশেও ঘাস পাওয়া যাচ্ছেনা। তাঁরা বলছেন, বাঁধের কাজ স¤পন্ন হয়েগেছে। এখন দুর্মুজ ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আওয়াল বলেন, আমার বাড়ির পাশে শান্তিপুরে কালনার হাওরের ক্লোজারে নামকাওয়াস্তে মাটি ফেলা হয়েছে। এখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। একই ইউনিয়নের গোজাউরা গ্রামের বাসিন্দা আলতাব হোসেন বলেন, রামনগর থেকে গোজাউরা পর্যন্ত চিলাই নদীর বেড়ি বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে ওই বেড়ি বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে। দোয়ারাবাজারে বাঁধের কাজ ৬৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাংগঠনিক স¤পাদক শহীদনূর আহমেদ। তিনি বলেন, বেশকিছু বাঁধ বালুমাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বাঁধ বন্যা ও অতি বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও বেশির ভাগ বাঁধেই কমপেকশন ও স্লোপের কাজে সমস্যা আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দোয়ারাবাজার উপজেলা শাখা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব সাদ্দাম হোসেন বলেন, বাঁধে মাটি ফেলার কাজ শতভাগ শেষ। এখন কেবল দুর্মুজ ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ঘাস লাগানোর কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এজন্য কাজের সময়সীমা আরো ১০ দিন বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যেসব বাঁধের কাজের ব্যাপারে অনিয়মের অভিযোগ এসেছিল তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাজের টেকসই মান ঠিক রাখতে প্রতিটি বাঁধের কাজ সরেজমিনে গিয়ে মনিটরিং করা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
দোয়ারাবাজারে শেষ হয়নি বাঁধের কাজ : নানা অনিয়মের অভিযোগ
- আপলোড সময় : ০৬-০৩-২০২৫ ০১:২৯:০০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০৩-২০২৫ ০১:৩১:১৭ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ